ক্ষুধার্ত শৈশব থেকে একবেলার স্বস্তি: বীরভূম থেকে কলকাতা—SPN-এর হাতে কিছু বঞ্চিত হৃদয়ের নীরব অঙ্গীকার
আমাদের চারপাশেই এক অন্য পৃথিবী বিদ্যমান—যেখানে শৈশব মানেই অনিশ্চয়তা, যেখানে দিনের আলো পৌঁছালেও অধিকারের আলো পৌঁছায় না। শিক্ষার সুযোগ, পুষ্টিকর খাবার, কিংবা এক মুহূর্তের নিরাপত্তাও যাদের কাছে আকাশছোঁয়া স্বপ্ন। এই অদেখা অথচ বাস্তব জগতের কথাই ভাবছিল স্টুডেন্টস প্রোগ্রেস নেটওয়ার্ক (SPN)-এর একদল স্বপ্ন দেখা মানুষ। সেই ভাবনা থেকেই শুরু হয় এক ছোট্ট কিন্তু অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ অঙ্গীকার—শিশু দিবসে এই বঞ্চিত শিশুদের কাছে পৌঁছানোর অঙ্গীকার। আমাদের উদ্দেশ্য ছিল খুব সহজ; হয়তো আমরা তাদের জীবন পাল্টে দিতে পারব না, কিন্তু অন্তত একবেলার আহার, সামান্য পোশাক, বা খাতা-কলম দিয়ে তাদের মুখে এক ক্ষণিকের হাসি ফোঁটাতে পারি।
আমরা প্রথম থেকেই স্থির করেছিলাম, এই উদ্যোগের প্রতিটি ধাপ হবে শতভাগ স্বচ্ছতার মোড়কে ঢাকা। সংগৃহীত প্রতিটি টাকার হিসাব রাখা হবে নিঁখুতভাবে, আর উদ্যোগ সম্পন্ন হওয়ার পর ছবির সঙ্গে বিস্তারিত রিপোর্ট প্রকাশ করা হবে। কারণ আমরা বিশ্বাস করি, যিনি বিশ্বাস করে সাহায্যের হাত বাড়ান, তাঁর জানার অধিকার আছে—তাঁর দানটি কোন শিশুর জীবনে কীভাবে আলোড়ন সৃষ্টি করল। এই স্বচ্ছতার অঙ্গীকার নিয়েই শুরু হলো আমাদের মানবিক যাত্রা।
প্রথম যে দিনটি আমরা ভুলতে পারবো না, সেটি ছিল বীরভূমের দিন। আমাদের সীমিত সামর্থ্য নিয়ে সেদিন পৌঁছালাম বীরভূমের সিউড়িতে। লক্ষ্য ছিল মাত্র কয়েকজন শিশুর মুখে খাবার তুলে দেওয়া। যখন নিজেদের চোখেই দেখলাম, কীভাবে ৬ জন ছোট্ট শিশু কলা আর পাউরুটি হাতে নিল, তখন যেন আমাদের দীর্ঘদিনের স্বপ্ন সত্যি হলো। আমরা কেবল চেয়েছিলাম শিশু দিবসটা অন্তত কয়েকজনের জন্য সার্থক হোক। কিন্তু যখন তাদের মুখে সেই নির্ভেজাল আনন্দ দেখলাম, সেই স্বস্তির হাসি দেখলাম, তখন বুঝলাম—এই কাজটুকু কতটা মূল্যবান। তাদের চোখের সেই ভরসা, ছোট্ট হাসি আর এক মুহূর্তের স্বস্তিই আমাদের পুরো টিমকে এক নতুন শক্তি এনে দিল।
এই কাজে যারা আমাদের পাশে ছিলেন, যারা সামান্য হলেও অনুদান দিয়েছিলেন, তাদের প্রতি আমাদের কৃতজ্ঞতা ভাষায় প্রকাশ করা অসম্ভব। আপনাদের সেই সহযোগিতা আর আমাদের টিমের অক্লান্ত পরিশ্রমের ফসল এই ছোট্ট হাসিগুলো। কিন্তু এই আনন্দটুকু পাওয়ার পরেই এল এক কঠিন বাস্তবতার মুখোমুখি হওয়া। বীরভূমে যা করলাম, তা তো সমুদ্রের সামনে এক ফোঁটা জলের মতো!
একথা ভাবতেই আমাদের বুকটা ভার হয়ে এলো যে, এখনও আরও অসংখ্য শিশু সাহায্যের অপেক্ষায়। তাদের জীবন পাল্টানোর ক্ষমতা হয়তো আমাদের নেই, কিন্তু তাদের একবেলার খাবার, নিরাপত্তা ও বেঁচে থাকার শক্তি হয়ে ওঠার পথটুকু যেন আমরা একসঙ্গেই হাঁটতে পারি, সেই আশা নিয়ে পরের গন্তব্যে পা বাড়ালাম।
নদীয়া জেলার কৃষ্ণনগরে গিয়ে আমরা আরও আটজন শিশু ও তাদের পরিবারের হাতে খাদ্যসামগ্রী তুলে দিতে পারলাম। তাদের মুখে যে ক্ষণিক স্বস্তির হাসি দেখলাম, তা আমাদের টিমের সদস্যদের হৃদয়ে এক গভীর আলোড়ন সৃষ্টি করলো। সেই মুহূর্তগুলো ক্যামেরার ফ্রেমে বন্দী করে রাখার মতো।
তবে এই সাফল্যের মাঝে একটি প্রশ্ন কাঁটার মতো বিঁধেছিল। আমাদের SPN-এর এত বড় পরিবার, অথচ এখনো অনেকেই কেন সাড়া দিল না? এই প্রশ্নটি আমাদের ভেতরে ভেতরে এক নৈতিক দ্বন্দ্বে ফেলে দিলো। আমরা টিচার্স’ ডে-তে কত টাকা খরচ করি, জন্মদিনে বন্ধুদের সাথে টাকা ওড়াতে দ্বিধাবোধ করি না— অথচ শিশু দিবসে, যে শিশুদের আজ সত্যিই একটু খাবার, একটু যত্ন দরকার, তাদের জন্য যদি আমরা মাত্র ১০ বা ২০ টাকাও তুলে দিতে না পারি, তাহলে কোন মুখে আমরা মানসিকতার কথা বলি? এই প্রশ্নটি নিজের কাছেই এক চরম অপমান বোধের সৃষ্টি করে।
আমরা জানি, আমাদের ডোনেশন বড় কিছু নয়। কেউ ১০ দিক, কেউ ৫০ দিক—তাতে হয়তো কারও জীবন পাল্টাবে না, কিন্তু আজ একটা ছোট পেট ভরবে। এই মানবিক উদ্যোগে আপনার দুই টাকারও মূল্য আছে। কারণ এই উদ্যোগটা কোনো সামাজিক দায়বদ্ধতা নয়, বরং এক মানবিক আন্তরিকতা—যা প্রমাণ করে আমরা এখনো মানুষের পাশে দাঁড়াতে জানি।
এরকমই এক ঝলমলে দিনে আমরা আরও একবার ফিরে গিয়েছিলাম বীরভূম জেলার সিউড়ির সেই পথগুলিতে। সেদিনের লক্ষ্য ছিল আরও দশটি শিশুর মুখে হাসি ফোটানো। তাদের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছিল টাটকা ফলমূল আর বসিয়ে তৃপ্তি করে খাওয়ানো হয়েছিল ডিম–ভাত। এই উদ্যোগটি নেওয়ার আগে আমরা কখনো ভাবিনি যে, এমন সামান্য আয়োজনে এত বড় কিছু অর্জন করা সম্ভব। শুধু মনে হয়েছিল—শিশু দিবসের এই বিশেষ দিনটি যদি অন্তত কয়েকজনের মুখে একবেলার আহার তুলে দেওয়ার মাধ্যমে সার্থক হয়, তবেই আমাদের চেষ্টা সফল। কিন্তু যখন খাবার পরিবেশনের পর তাদের মুখে সেই নির্ভেজাল, প্রাণখোলা আনন্দ দেখলাম, সেই ছোট্ট ছোট্ট হাতগুলি ফল আর ভাতের থালা বুকের কাছে চেপে ধরল, তখন সত্যিই অনুভব হলো—এই শিশু দিবসটা আজ যেন সত্যিকার অর্থেই শিশুদের জন্য পরিপূর্ণ হলো। তাদের চোখে দেখা সেই একবেলার আহারের তৃপ্তির হাসি, সেই মুহূর্তের স্বস্তি—এটাই প্রমাণ করে যে আমাদের এই ছোট্ট উদ্যোগটুকুও জীবনকে কতটা উজ্জ্বল করে তুলতে পারে। এই স্মৃতি আমাদের টিম মেম্বারদের কাছে এক অমূল্য সম্পদ, যা আগামী দিনে আরও বড় কাজ করার প্রেরণা যোগায়।
আমাদের এই যাত্রার আরেকটি পর্ব সম্পন্ন হলো কলকাতা শহরের প্রান্তে, যেখানে ১৫ জন শিশুর হাতে কিছু খাবার তুলে দেওয়া সম্ভব হয়েছে। ছোট্ট একটি বাচ্চা খাবার হাতে পেয়ে যেভাবে তা বুকের কাছে চেপে ধরল—সেই দৃশ্যটাই আমাদের কাছে সবথেকে বড় প্রাপ্তি ও শ্রেষ্ঠ পুরস্কার।
আজ আমরা হাত জোড় করে শুধু এইটুকুই বলতে চাই—এই উদ্যোগটা তখনই সত্যিই সফল হবে, যখন আমাদের SPN পরিবারের প্রত্যেক সদস্য মন থেকে একবার সাহায্যের হাত বাড়াবেন। আপনারা আমাদের পাশে থাকলে, আগামী দিনগুলোতেও আমরা আরও অনেক শিশুর জীবনে আলো জ্বালাতে পারব। এই ভরসা আর মানবিকতার পথটুকু যেন আমরা একসঙ্গেই হাঁটতে পারি।
আমাদের এই যাত্রাপথে আপনার ক্ষুদ্র সাহায্যও এক বিশাল শক্তি। আপনার সামান্য ১০/২০ টাকাও একটি শিশুর মুখে ডিম-ভাত তুলে দেওয়ার সামর্থ্য রাখে।
আপনার মানবিক সাড়া দেওয়ার সুবিধার্থে, নিচে আমরা ডোনেশনের জন্য QR Code এবং পেমেন্ট ডিটেইলস দিচ্ছি। এক ক্লিকেই আপনি হতে পারেন অন্য কারও জীবনের আলোর উৎস।
আসুন, এক হয়ে এই শিশুদের পাশে দাঁড়াই।





.jpg)
Social Platforms