Prarthona Kobita Notes

 

প্রার্থনা : কবিতার সম্পূর্ণ বিশ্লেষণ ও নোট

ভূমিকা - 

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর রচিত ‘প্রার্থনা’ কবিতাটি বাংলা সাহিত্যের চিরায়ত ভক্তি ও আরাধনার ধারা থেকে বিচ্যুত হয়ে এক উন্নততর মানবিক ও দার্শনিক চেতনার স্বাক্ষর বহন করে। এই কবিতা কেবল একটি কাব্যিক আবেদন নয়, এটি কবির জীবনব্যাপী উপলব্ধির নির্যাস, যেখানে পার্থিব সুখ-সম্পদ বা দুঃখ-কষ্ট থেকে অলৌকিক পরিত্রাণের আকাঙ্ক্ষা সম্পূর্ণ অনুপস্থিত। প্রচলিত প্রার্থনায় মানুষ যখন দেব-দেবীর কাছে ব্যক্তিগত ভোগ-বিলাস বা করুণা ভিক্ষা করে, তখন রবীন্দ্রনাথ এই কবিতায় চেয়েছেন আত্মিক শক্তি, নির্ভীকতা এবং নৈতিক দৃঢ়তা। তাঁর কাছে মুক্তি বাইরের সহায়তায় নয়, বরং মানুষের ভেতরের অদম্য সাহস, সত্যনিষ্ঠা এবং নিষ্কাম কর্মের প্রতি অবিচল নিষ্ঠার মাধ্যমে সম্ভব। এই কবিতাটি সেই কারণে আধ্যাত্মিকতার চেয়েও বেশি পরিমাণে মানবতাবাদী দর্শনের প্রবক্তা। এই কবিতা প্রমাণ করে যে, মানুষের মহত্ত্ব তার দুর্বলতার নিবৃত্তিতে নয়, বরং সেই দুর্বলতা অতিক্রম করে মাথা উঁচু করে দাঁড়ানোর সংকল্পে। ‘প্রার্থনা’ কবিতাটি তার গভীর জীবনবোধ, সংযত আবেগ এবং উচ্চ নৈতিকতার কারণে বাংলা সাহিত্যে এক অসামান্য মর্যাদা লাভ করেছে।

১. কবি পরিচিতি - 

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর (১৮৬১–১৯৪১) ছিলেন বিংশ শতাব্দীর বাঙালি সংস্কৃতি ও সাহিত্যের এক বিশ্বজনীন প্রতিভাধর ব্যক্তিত্ব। তাঁর জীবন ও সাহিত্যসাধনা ছিল এক অনন্ত মুক্তি ও সুন্দরের অন্বেষণ। জোড়াসাঁকোর ঠাকুর পরিবারে তাঁর জন্ম হলেও তাঁর মানসলোকে ছিল গোটা বিশ্ব।

সাহিত্যিক অবদান ও জীবনদর্শন: রবীন্দ্রনাথের সাহিত্য জীবন ছিল বৈচিত্র্যময় ও বহুমাত্রিক। তাঁর জীবনদর্শনে প্রকৃতি, মানবপ্রেম, স্বদেশচেতনা এবং আধ্যাত্মিকতা একাকার হয়ে গিয়েছিল। তিনি বিশ্বাস করতেন, মানুষ ও প্রকৃতির মধ্যেই ঈশ্বরের শ্রেষ্ঠ প্রকাশ নিহিত। তাই তাঁর কবিতায় দেবালয়ের নির্জনতা নয়, বরং জীবন ও কর্মক্ষেত্রের মুখরতা প্রাধান্য পেয়েছে। তিনি সাহিত্যকে কেবল মনের বিনোদন নয়, বরং আত্মোপলব্ধি ও সমাজ-সংস্কারের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করেছেন। তাঁর কাব্যের মূল দর্শন হলো—দুঃখকে অস্বীকার না করে তাকে সাহস ও প্রেমের সঙ্গে গ্রহণ করা।

নোবেল জয় ও প্রভাব: ১৯১৩ সালে ‘গীতাঞ্জলি’ কাব্যগ্রন্থের ইংরেজি অনুবাদ ‘Song Offerings’ এর জন্য তিনি সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার লাভ করে এশিয়ায় প্রথম এই সম্মান অর্জন করেন। এই পুরস্কার বাংলা সাহিত্যকে বিশ্বের দরবারে স্থায়ী আসন দেয়। তিনি শান্তিনিকেতনে বিশ্বভারতী প্রতিষ্ঠা করেন, যা তাঁর শিক্ষাদর্শন এবং বিশ্বজনীন মানবতাবাদের প্রতীক। তাঁর কবিতা, গান, উপন্যাস, নাটক—সবকিছুই বাঙালি জাতির আত্মপরিচয় নির্মাণে এবং আধুনিকতার পথ প্রশস্ত করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। ‘প্রার্থনা’ কবিতাটি তাঁর এই পরিণত জীবনদর্শন, যেখানে মানুষের আত্মমর্যাদা সকল পার্থিব লোভের ঊর্ধ্বে স্থান পেয়েছে, তারই একটি উজ্জ্বল কাব্যিক উদাহরণ।

২. কবিতার বিষয় ও প্রেক্ষাপট - 

‘প্রার্থনা’ কবিতাটির প্রধান বিষয়বস্তু হলো আত্মনির্ভরশীলতা, নৈতিক সাহস এবং নিষ্কাম কর্মের প্রতি সংকল্প। কবি এখানে ঈশ্বরের কাছে পাঁচটি মূল বিষয়ে শক্তি চেয়েছেন, যা তাঁকে ব্যক্তিগত দুর্বলতা এবং জাগতিক ভণ্ডামি থেকে রক্ষা করবে। এই প্রার্থনায় তিনি চান, জীবনে চরম দারিদ্র্য বা আঘাত এলেও যেন তিনি দুর্বল বা আশামুখী হয়ে কারও কাছে সাহায্য না চান, বরং নিজের শক্তিতেই সেই ভার বহন করতে পারেন।

আধ্যাত্মিক প্রেক্ষাপট: কবিতাটি কবির জীবনের সেই সময়ের দার্শনিক উপলব্ধির ফসল, যখন তিনি বুঝতে পারেন যে, প্রকৃত ধর্ম বা আধ্যাত্মিকতা কেবল মন্দিরের নিরালায় বা শাস্ত্রের উপদেশে নেই, বরং তা নিহিত আছে মানুষের আচরণ, কর্তব্যপরায়ণতা এবং নৈতিক শুদ্ধতার মধ্যে। তৎকালীন সমাজে যখন ভক্তিকে প্রায়শই স্বার্থসিদ্ধির জন্য ব্যবহার করা হতো, কবি তখন সেই ক্ষুদ্রতা থেকে সরে এসে এক বৃহত্তর মানব ধর্মের আহ্বান জানান।

মনোভাব ও বার্তা: কবিতার ভাব বা মেজাজ অত্যন্ত দৃঢ় এবং সংকল্পবদ্ধ। এটি ভীরুতা বা করুণার স্বর নয়, বরং অন্তরের শক্তির প্রতি আস্থার স্বর। এই কবিতার মাধ্যমে কবি স্পষ্ট বার্তা দিয়েছেন যে, মানুষ যেন নিজের মনকে মিথ্যাচার, পাপের আকর্ষণ এবং দর্পতৃষা (অহংকারের লোভ) থেকে মুক্ত রাখে। কারণ এই মানসিক দুর্বলতাগুলিই মানুষকে প্রকৃত মুক্তি থেকে দূরে সরিয়ে রাখে। তাই এই কবিতা দৈবনির্ভরতার বিরুদ্ধে আত্মশক্তির উত্থানের একটি কাব্যিক ঘোষণা।

৩. কবিতার থিম বিশ্লেষণ - 

‘প্রার্থনা’ কবিতার প্রতিটি পঙক্তিতে রবীন্দ্রনাথের গভীর জীবনদর্শন এবং মানবিক দৃষ্টিভঙ্গি সুস্পষ্ট। এর থিম বিশ্লেষণ বহুমাত্রিক ও সুদূরপ্রসারী:

ক. আত্মিক মুক্তি ও চারিত্রিক দৃঢ়তার আকাঙ্ক্ষা:

এই কবিতার মূল কেন্দ্রবিন্দু হলো আত্মিক মুক্তি। কবি কোনো অবস্থাতেই অলৌকিক পরিত্রাণ চাননি। তিনি চেয়েছেন, তাঁর হৃদয়তন্ত্রী যেন দারিদ্র্য বা অপমানের কাছে অবশ না হয়ে যায়। এটি কেবল শারীরিক শক্তি নয়, বরং মানসিক ও চারিত্রিক দৃঢ়তার প্রার্থনা। এই শক্তি ব্যক্তিকে সমাজের চাপ বা তুচ্ছতার কাছে মাথা নত করতে দেয় না। কবির এই চাওয়া প্রমাণ করে, জীবনের সংগ্রামকে অস্বীকার না করে, বরং সাহসের সঙ্গে তা গ্রহণ করাই হলো প্রকৃত আধ্যাত্মিকতার পথ।

খ. নিষ্কাম কর্মযোগ ও আসক্তিহীনতা:

কবিতার গভীরতম দার্শনিক থিমটি নিহিত আছে নিষ্কাম কর্মের আদর্শে। কবি ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করেছেন, তিনি যেন কর্মের ফল বা পুরস্কারের আসক্তিহীনা হতে পারেন। এই ধারণা সরাসরি শ্রীমদ্ভগবদ্গীতার শিক্ষা থেকে অনুপ্রাণিত। কর্ম করাটাই মানুষের ধর্ম, কিন্তু সেই কর্মের ফল কী হবে, সেই লোভ বা প্রত্যাশা যদি মনকে আচ্ছন্ন করে, তবে তা বন্ধন সৃষ্টি করে। রবীন্দ্রনাথের এই প্রার্থনা মানুষকে লোভ ও অহংকার থেকে মুক্ত হয়ে, কেবল কর্তব্যবোধে চালিত হওয়ার শিক্ষা দেয়।

গ. মানবিক বিনয় ও অহংকার থেকে মুক্তি:

প্রচলিত অর্থে বিনয়কে সাধারণত দুর্বলতা হিসেবে দেখা হলেও, এই কবিতায় বিনয় হলো নৈতিক শক্তি। কবি প্রার্থনা করেছেন, যেন তাঁর মনে দর্পতৃষা বা অহংকারের কোনো স্থান না পায়। তিনি যেন তুচ্ছ বিষয়ে গর্ব করা থেকে বিরত থাকতে পারেন। এই বিনয় কোনো হীনমন্যতা নয়, বরং আত্মশুদ্ধি ও সরল জীবনযাপনের মাধ্যমে অর্জিত এক উন্নত মানসিক অবস্থা, যা তাঁকে সকল প্রকার ভণ্ডামি ও মিথ্যাচার থেকে দূরে রাখবে।

ঘ. দৈবনির্ভরতার বিরুদ্ধে আত্মবিশ্বাসের প্রতিষ্ঠা:

এই কবিতার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ চেতনা হলো দৈবনির্ভরতাকে প্রত্যাখ্যান করে আত্মবিশ্বাসের প্রতিষ্ঠা। কবি ঈশ্বরের কাছে অলৌকিক সাহায্য নয়, চেয়েছেন সেই অন্তরের শক্তি যার দ্বারা তিনি নিজের মনকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারবেন এবং পাপের পথে সঞ্চার করা থেকে বিরত থাকবেন। এই আবেদন মানুষের সুপ্ত শক্তিকে জাগিয়ে তোলে এবং তাকে শেখায় যে, জীবনের সমস্যার সমাধান নিজেই করতে হবে, অলৌকিকতার ওপর নির্ভর করে নয়। এই মানবিক দৃষ্টিভঙ্গিই এই কবিতাকে চিরকালীন আবেদন দান করেছে।

ঙ. ভক্তি নয়, সংকল্পই প্রধান:

রবীন্দ্রনাথের এই প্রার্থনা চিরাচরিত ভক্তির পথে হেঁটে গেলেও এর প্রধান বৈশিষ্ট্য হলো সংকল্প। কবি কেবল আবেদন করেননি, তিনি যেন দৃঢ় সংকল্পের সঙ্গে নিজের মনকে সংযত রাখতে পারেন, সেই শক্তি চেয়েছেন। অর্থাৎ, প্রার্থনা যেন কেবল কথায় না থাকে, তা যেন কর্মে এবং আচরণে প্রকাশিত হয়—এই অঙ্গীকারই এই কবিতার আবেগিক গভীরতা

৪. গুরুত্বপূর্ণ শব্দের অর্থ - 

কবিতার মূল ভাব বোঝার জন্য গুরুত্বপূর্ণ শব্দের সঠিক অর্থ ও তার প্রয়োগ বিশ্লেষণ করা হলো:

শব্দঅর্থপ্রয়োগ/ব্যাখ্যা
আশামুখীকরুণাপ্রার্থী বা সাহায্যের জন্য মুখাপেক্ষী হওয়াদারিদ্র্য বা কষ্টের মুখে যেন অন্যের কাছে হাত পাততে না হয়, সেই সংকল্প বোঝাতে ব্যবহৃত।
অবশশক্তিহীন, দুর্বল বা অসাড়জীবনের আঘাতে যেন মন দুর্বল হয়ে না যায়, সেই চারিত্রিক দৃঢ়তা বোঝানো হয়েছে।
হৃদয়তন্ত্রীহৃদয়ের সূক্ষ্ম অনুভূতি বা তার, যা আবেগের দ্বারা চালিতহৃদয়ের আবেগ যেন দুর্বল হয়ে না পড়ে, তার নিয়ন্ত্রণ বোঝাতে ব্যবহৃত।
দৈন্যদারিদ্র্য বা চরম অভাবচরম অভাবের মধ্যেও যেন আত্মমর্যাদা অক্ষুণ্ণ থাকে, সেই প্রতিজ্ঞা।
দর্পতৃষাঅহংকার বা গর্ব করার প্রবল লোভ/আকাঙ্ক্ষাতুচ্ছ অহংকার বা মিথ্যা গর্ব থেকে মুক্তি পাওয়ার বাসনা।
সহজে সয়কষ্টের ভারকে বিনীতভাবে এবং নীরবে সহ্য করে নেওয়াদুঃখকে এড়িয়ে না গিয়ে, তাকে মেনে নিয়ে চলার মানসিক শক্তি।
সংযতনিয়ন্ত্রিত, সংযম দ্বারা আবদ্ধমনকে পাপ বা মিথ্যার আকর্ষণ থেকে দূরে রাখার সংকল্প।
আসক্তিহীনাফললাভের আকাঙ্ক্ষা বর্জিতনিষ্কাম কর্মযোগের আদর্শে, কর্মের ফল প্রত্যাশা না করার মানসিকতা।
সঞ্চারপ্রবেশ করা, গমন করা বা প্রভাব বিস্তার করামন যেন পাপ বা অনৈতিকতার পথে চালিত না হয়।
তুচ্ছ করিছোট করে দেখা বা গুরুত্ব না দেওয়াজীবনের ছোট ছোট অহংকার বা লোভকে অবজ্ঞা করার শক্তি।

৫. কাব্যিক বৈশিষ্ট্য - 

‘প্রার্থনা’ কবিতাটি রবীন্দ্রনাথের পরিশীলিত কাব্যশৈলী এবং নিগূঢ় দার্শনিক ভাবনার এক চমৎকার সমন্বয়।

ক. চিত্রকল্পের ব্যবহার: এই কবিতায় প্রত্যক্ষ দৃশ্যের বদলে মানসিক চিত্রকল্পের ব্যবহার হয়েছে। যেমন, ‘আশামুখী’ হয়ে হাত পাতার চিত্রটি পাঠকের মনে চরম অসহায়ত্বের ভাব ফুটিয়ে তোলে, যার বিপরীত শক্তিকে কবি প্রার্থনা করেছেন। আবার, ‘হৃদয়তন্ত্রী’ শব্দটি দ্বারা হৃদয়ের আবেগের সূক্ষ্ম তারগুলিকে বোঝানো হয়েছে, যা মনস্তাত্ত্বিক গভীরতা যোগ করেছে।

খ. ভাষাশৈলী ও মেজাজ: কবিতার ভাষা সরল, মার্জিত এবং তৎসম শব্দ প্রধান। এই ভাষা কবির উচ্চ দার্শনিক ভাবকে সহজে বহন করেছে। কবিতার মেজাজ (Mood) শান্ত, পবিত্র এবং সংকল্পবদ্ধ। এই মেজাজ পাঠকের মনে এক ধরনের স্থিরতা ও আত্মবিশ্বাসের সঞ্চার করে।

গ. ছন্দ ও রচনারীতি: কবিতাটি অক্ষরবৃত্ত ছন্দে রচিত। এর গতি ধীর ও সংযত, যা গম্ভীর দার্শনিক বিষয়বস্তুর সঙ্গে পুরোপুরি মানানসই। এই ধীরগতির রচনারীতি ভাবের গভীরতাকে আরও বেশি প্রতিষ্ঠিত করেছে। বাক্য গঠন সরল হলেও ভাবের গভীরতা কারণে তা সাহিত্যধর্মী হয়েছে।

ঘ. প্রতীক ও অলঙ্কার: এই কবিতায় অলঙ্কারের চেয়ে প্রতীকী ব্যঞ্জনা বেশি শক্তিশালী। যেমন, ‘দৈন্য’ এখানে শুধু অভাব নয়, বরং জীবনের সর্বাত্মক দুর্বলতার প্রতীক। ‘দর্পতৃষা’ অহংকারের লোভের প্রতীক। অলঙ্কারের মধ্যে ‘হৃদয়তন্ত্রী’ রূপক অলঙ্কারের চমৎকার উদাহরণ।

ঙ. আবেগিক গভীরতা ও স্বর: কবিতার স্বর (Tone) বিনয়ী হলেও তাতে চরম দুর্বলতা নেই, বরং আছে আত্মমর্যাদা রক্ষার দৃঢ় প্রত্যয়। এই আবেগিক গভীরতা কবিকে চিরাচরিত ভক্তিমূলক কবিতা থেকে আলাদা করে দিয়েছে। কবি যেন ঈশ্বরের সামনে দাঁড়িয়েও নিজের আত্মসত্তাকে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিয়েছেন।

চ. আধ্যাত্মিক ব্যঞ্জনা: এই কবিতার সবচেয়ে বড় বৈশিষ্ট্য হলো এর আধ্যাত্মিক ব্যঞ্জনা। এটি প্রচলিত ধর্মীয় আচার বা বিশ্বাসের ধার ধারে না; বরং মনকে সত্য, প্রেম ও নৈতিকতায় শুদ্ধ করার মাধ্যমে ঈশ্বরের দিকে এগিয়ে যাওয়ার পথ দেখায়।

৬. উপসংহার - 

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘প্রার্থনা’ কবিতাটি কেবল একটি কাব্যিক সৃষ্টি নয়, এটি মানুষের জীবনের এক শাশ্বত মূল্যবোধের প্রতীকী উচ্চারণ। এই কবিতার আবেগিক নির্যাস হলো—জীবনকে অস্বীকার নয়, বরং সাহসের সঙ্গে জীবনের সমস্ত আঘাতকে বরণ করে নেওয়া। কবি চূড়ান্ত বার্তা দিয়েছেন যে, প্রকৃত মুক্তি বা আশীর্বাদ আসে বাইরের কোনো অলৌকিক হস্তক্ষেপ থেকে নয়, বরং নিষ্কাম কর্ম, সত্যনিষ্ঠা এবং আত্মমর্যাদার মাধ্যমে। এই কবিতা তরুণ শিক্ষার্থীদের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ নৈতিক শিক্ষা বহন করে; এটি তাদের শেখায় যে, বর্তমানের প্রতিযোগিতা ও অনিশ্চয়তার যুগে টিকে থাকার জন্য কেবল পুঁথিগত বিদ্যা নয়, প্রয়োজন চারিত্রিক দৃঢ়তা এবং নৈনিক বল। ‘প্রার্থনা’ কবিতাটি সেই কারণে বাঙালির আত্মিক শক্তিমত্তার এক অনন্ত উৎস, যা আমাদের অহংকার ও দুর্বলতা ত্যাগ করে এক সংযত ও মহৎ জীবন যাপনের দিকে অবিরাম পথ দেখায়।

*সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন শীঘ্রই আপলোড হয়ে যাবে।

Updates Exams Notes eBooks Courses